ডেঙ্গ জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে করনীয় ||




বন্ধুরা সম্প্রতি বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার পর ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা সম্পর্কিত জানার এবং এই মশার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশলে অবলম্বনের পথ খোঁজচ্ছে দেশের সহচেতন নাগরিকরা।

বন্ধুরা প্রথমে এডিস মশা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক।

১। এডিস মশা দেখতে কেমন হয়?

"এই জাতীয় মশার দেহে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে, যে কারণে এটিকে টাইগার মশা বলা হয়।" এডিস মশা সাধারণত মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।

২। স্ত্রী মশার কমড়ে নাকি পুরুষ মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়?
উত্তরটা হচ্ছে স্ত্রী মশা। হ্যাঁ বন্ধুরা স্ত্রী মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। তবে স্ত্রী মশা চেনার উপায় হচ্ছে স্ত্রী মশার অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি পুরুষ মশার অপেক্ষাকৃত কম লোমশ দেখতে হয়।

৩। এডিস মশা কি শুধু সকালে কামড়ায়?

না বন্ধুরা, সাধারনত দিনের আলোতে অর্থাৎ-
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এডিস মশা কামড়ায়। তবে কামড়ানোর হার সবচেয়ে বেশি থাকে সূর্যোদয়ের পর দুই-তিন ঘন্টা এবং সূর্যাস্তের আগের কয়েক ঘন্টা।"

রাতে অন্ধকারে এডিস মশা না কামড়ালেও রাতে ঘরের   বাতির আলোতে কামড়াতে পাররে বলে মনে কররচাছেন বিশেষঞ্গ রা।

৪। এডিস মশা কি  শুধু পায়েই কামড়ায়? 

এই কথাটি একদম ভিত্তিহীন। সাধারনত আমাদদের শরীরের পায়ই অনাবৃত্ত থাকে।তাই বেশির ভাগ মশা পায়েই কামড়ায়। তবে শুধু যে পায়েই কামড়ায় বিষয়টি এ রকম নয়।

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়, যেমন--ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার ও হেমোরেজিক ফিভার।

১. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেইসঙ্গে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থাকে। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসে।

২. শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে মাথায়, চোখের পেছনে, হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

৩. জ্বর হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিন পর সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়, সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি, রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তবোধ করে, রুচি কমে যায় ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা দেখা যায় যেমন-

১. শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া,

২. পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা,

৩. মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব বা রক্তক্ষরণ, বুকে বা পেটে পানি আসা ইত্যাদি।

৪. আবার, লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৫. ডেঙ্গুজ্বরের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেলিউর যোগ হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসাঃ

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা সাধারণ জ্বরের মতোই। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীই সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভাল হয়ে যায়। এমনকি কোন চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে যাতে ডেঙ্গুজনিত কোন মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি না হয়।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে যা যা করতে হবে।

১. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে, দিনে সর্বোচ্চ ৪ বার।

২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

৩. জ্বর কমানোর জন্য বার বার শরীর মুছে দিতে হবে।

৪. জ্বরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার, যেমন--ওরাল স্যালাইন, ফলের জুস, শরবত ইত্যাদি পান করতে হবে।

৫. বমির কারণে যদি কোন রোগী পানি পান করতে না পারেন সেক্ষেত্রে স্যালাইন দিতে হবে।

৬. এ্যান্টিবায়োটিক, এ্যাসপিরিন বা অন্য কোন ব্যথানাশক ওষুধ একেবারেই সেবন করা যাবে না।

৭. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
৮. ডাক্তারের পরিক্ষার রিপোর্ট যদি রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয় তবে রক্তদাতাকে অবশ্যই জোগাড় করে রাখতে হবে।

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের জন্য এডিস মশা রোধ করা এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত অথবা ড্রেনের পানিতে এরা ডিম পারে না। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানসমূহকে পরিষ্কার করতে হবে এবং পাশাপাশি মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১. বাড়ির আশপাশের জলাশয়, ঝোপঝাড়, জঙ্গল ইত্যাদি থাকলে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২. ঘরের বাথরুমে বা অন্য কোথাও জমানো পানি যেন ৫ দিনের বেশি না থাকে। আবার ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার বা এ্যাকুয়ারিয়ামের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে।


৩. যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন স্থানে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।

৪. দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাবেন।


৫. এডিস মশা সাধারণত সকালে বা সন্ধ্যায় কামড়ায় যদিও অন্য যে কোন সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই ঘরের দরজা এবং জানালায় নেট লাগাতে হবে।

৬. ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে কোন মশা তাকে কামড়াতে না পারে।

৭. মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচতে দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়?

সাধারনত বন্ধুরা বর্ষার সময় এ রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করা যায়।

১. আপনার ঘরে এবং আশেপাশে যে কোন জায়গায়, ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যাক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা/নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি শেল ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি তিন দিন পর পর অপসারণ করুন।

২.ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ঘষে ঘষে পরিস্কার করুন।

৩.অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখতে হবে যাতে পানি না জমে।

৪. দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।

সবশেষে একটিই কথা!

বন্ধধুরা ভয় পাওয়া কিছুই নাই, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। এই জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সঠিকভাবে চললে কয়েক দিনেই ডেঙ্গু রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। যেহেতু এ রোগের কোন ভ্যাকসিন নেই, তাই পাড়া প্রতিবেশি বা নিজ উদ্যোগে আপনার আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার মাধ্যমে মশার সংখ্যা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলুন। তবে রক্ষা পাবেন এই ভয়াবহ জীবাণু থেকে।

এই ধরনের আরো সচেতনতা মূলক পোস্ট পেতে মাইজভাণ্ডারী স্কুলের সাথে থাকুন। এবং সবার সাথে শেয়ার করে অন্যকেও সচেতন করুন।

No comments

Theme images by Leontura. Powered by Blogger.